কারিকুলাম গাইড
প্রাক-প্রাথমিক (প্রি-কেজি -১ এবং কিন্ডারগার্টেন)
বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টারের এটি পাঠক্রমের প্রথম ধাপ। এই স্তরে প্রি-কেজি শিক্ষার্থীরা শেখা শুরু করে এবং দক্ষতা গড়ে তোলে। তাদের নিজস্ব গতি ও দক্ষতা অনুযায়ী শেখার উপকরণ ও কাজ দেওয়া হয় এক আনন্দময় ও যত্নশীল পরিবেশে। প্রি-কেজি শিক্ষার্থীরা প্রধানত এই বিষয়গুলো শেখে:
- শরীরের ব্যবহার: চোখ-হাতের সমন্বয়, স্মৃতি, ধাঁধা মেলানো, নাটক।
- যোগাযোগ: কথা বলা, শোনা, শব্দ ও অক্ষর শেখা, লেখা, মুখের অভিব্যক্তি।
- পড়ার প্রস্তুতি: বাংলা ও ইংরেজি অক্ষর চেনা, অক্ষরের শব্দ শেখা, ছড়া, গল্প বলা।
- গণিত: সংখ্যা চেনা, ধাঁধা মেলানো, আকার ও পরিমাপ, সমস্যা সমাধান।
- লেখা: অক্ষর আঁকা, চোখ-হাতের সমন্বয়, সৃজনশীল কার্যকলাপ।
- ভাষা: কথা বলা, শোনা, লেখা, ছবি আঁকা।
- শারীরিক ও বিজ্ঞান: আমাদের চারপাশের জিনিস চেনা, জীবিত ও অজীব।
- সামাজিক দক্ষতা: অন্যের সাথে শেয়ার করা, যত্ন নেওয়া, শুভেচ্ছা, সৌজন্য।
শ্রেণিকক্ষগুলোতে খেলার উপকরণ থাকে যা শিক্ষার্থীদের শেখায়। প্রি-কেজি স্তরে শিশুরা আনন্দ করে শিখে, যা তাদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশে সহায়ক।
প্রাথমিক বিদ্যালয় (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী)
আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সক্রিয়ভাবে শেখার অংশ হিসেবে দেখা হয়। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করেন এবং সাহায্য করেন। আমাদের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সহজে বুঝতে শেখানো এবং ইসলামের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের মনোভাব ও দক্ষতা গড়ে তোলা।
বাসমাহ স্কুল এন্ড কালচারাল সেন্টারে একটি দিন, প্রাথমিক বিভাগ
হাসি ও সালাম
বাসমাহর শিক্ষকরা প্রতিদিন সকালে হাসি ও ‘আসসালামু আলাইকুম’ দিয়ে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানান। এতে সালামের সুন্নত শেখা হয়, এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়।
সকালকালীন সমাবেশ
শক্তি দিয়ে দিন শুরু করতে সকালের সমাবেশে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। এখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে তারা আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে।
সার্কেল টাইম
সার্কেল টাইমে আগের দিনের শেখা বিষয়, নৈতিক শিক্ষা এবং শ্রেণির নিয়মগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর শিক্ষার্থীরা জানতে পারে, দিনটিতে কী কী করা হবে।
আরবি ক্লাস
আরবি এমনভাবে শেখানো হয় যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে এবং আরবিতে কথা বলতে শিখতে পারে।
খেলাধুলা
শিক্ষার্থীদের প্রিয় ক্লাস হল খেলাধুলা। প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন খেলা ও ব্যায়াম শিখে। এতে দলবদ্ধভাবে কাজ করা, ধৈর্য শেখা এবং সাফল্যের জন্য চেষ্টা করার মানসিকতা গড়ে ওঠে।
টিফিন / লাঞ্চ টাইম
হাত ধোয়া, টেবিল সাজানো এবং খাবারের আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা – এগুলো টিফিন/লাঞ্চ টাইমের অংশ। শিক্ষকরা খাবার খাওয়ার শিষ্টাচার শেখান, যেমন ডান হাতে খাওয়া, শেয়ার করা এবং খাবার শেষ করা।
আফটার স্কুল সুবিধা
কিছু শিক্ষার্থীর ভাইবোনদের আলাদা সময়ে ছুটি বা অভিভাবকদের কাজের কারণে দেরি হলে, স্কুলে থেকে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সময়কে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক করা হয় বিভিন্ন কার্যক্রম, টিফিন বা ছোট একটি ঘুমের মাধ্যমে, যাতে তারা বাড়ি যাওয়ার আগে সতেজ থাকে।
ছুটির সময়
আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছুটির সময় একটি পিক-আপ কার্ড সিস্টেম রয়েছে, যা শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিকেই শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
প্রাথমিক বিভাগ
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের প্রাথমিক বিভাগ সফলভাবে আমাদের স্কুলের লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক পরিবেশে উৎসাহী শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করে। আমরা প্রতিদিন আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছি, যা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং যোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রাথমিক বিভাগে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে।
মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ
- আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতিতে কার্যক্রম ভিত্তিক শিক্ষা
- ভাষা, বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধারণা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শেখানো
- শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ও বাইরে ইসলামী শিক্ষা প্রদান
- ইসলামী মূল্যবোধ ও শিক্ষা দিয়ে শ্রেণিকক্ষ সাজানো
- কুরআনের সঠিক উচ্চারণ শেখার জন্য আরবি ও তারতিল পড়ানো
- মাসিক নৈতিক মূল্যবোধের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী শিক্ষা দেয়া
- স্কুলে জামাতে জোহরের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা
- ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও বিশেষজ্ঞদের সাথে সাক্ষাত ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ
- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ
আমরা শিক্ষার্থীদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দেই যাতে তারা নিজেরাই শেখার আগ্রহী হয়। এখানে কিছু বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
কুরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থকরণ
শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই কুরআন তেলাওয়াতের কৌশল শেখে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন সূরা, হাদিস এবং দোয়া মুখস্থ করে।
আরবি ভাষা
আরবি ভাষা সহজভাবে শেখানো হয়, যাতে পড়া, লেখা এবং বলার দক্ষতা গড়ে ওঠে। এটি কুরআনের ভাষা হওয়ায় প্রাথমিক পাঠ্যক্রমে আরবিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ইংরেজি
ইংরেজি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শেখানো হয় যাতে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করতে পারে। পড়া, লেখা, শোনা এবং কথা বলার দক্ষতা বিকাশ করা হয়।
বাংলা
বাংলা জাতীয় ভাষা হওয়ায় এটি স্কুলে গুরুত্বের সাথে শেখানো হয়, ইংরেজি ও আরবির মতোই যত্ন নিয়ে পড়ানো হয়।
গণিত
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গণিত ধারণা শেখানো হয়, যা ব্যবহারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সহজে বোঝানো হয়। এই পদ্ধতি তাদের ভবিষ্যতের জন্য গণিতে শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক।
ইসলামী শিক্ষা
ইসলামী শিক্ষা এমনভাবে শেখানো হয় যাতে শিক্ষার্থীরা নৈতিকতা ও বিশ্বাসের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
বিজ্ঞান
বিজ্ঞান এমনভাবে শেখানো হয় যাতে আল্লাহ্র সৃষ্টির বিস্ময় উপলব্ধি করা যায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ধারণা বোঝে এবং নিজস্ব পরীক্ষা ও আবিষ্কার করতে উৎসাহিত হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)
আইসিটি পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং, ওয়েব ব্রাউজিং, রোবট ও বায়োমেট্রিক্সের মতো প্রযুক্তি শেখানো হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানে ভূগোল, ইতিহাস এবং অন্যান্য সংস্কৃতি শেখানো হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল ও সক্রিয় নাগরিক হয়ে উঠতে পারে। মুসলিম বীরদের জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয় বোঝানো হয়।
অভিব্যক্তিমূলক আর্টস
শারীরিক শিক্ষা
শারীরিক শিক্ষায় বাস্কেটবল, মার্শাল আর্টস, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদি খেলা শেখানো হয়, যা স্বাস্থ্য ও ফিটনেস বজায় রাখতে সহায়ক।
মূল্যায়ন ও গ্রেডিং
শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষক ও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীর উন্নতি ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ঠিক করতে সহজে এটি বুঝতে পারে।